[রিভিউ লেখক : ইসরাত জাহান ]
কিতাব: প্রিয়তমা
লেখক :সালাহউদ্দিন জাহাঙ্গীর
প্রকাশনী :নবপ্রকাশ
প্রচ্ছদ ধারণা:কাজী যুবাইর মাহমুদ
প্রচ্ছদ সূচীশৈলী : রাবেয়া আফরোজা
পৃষ্ঠা সংখ্যা:৩৫২
মুদ্রিত মূল্য :৫২০/-
এক নযরে লেখক পরিচিতি :
সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর এর পাঠ্যগ্রহ মূলত ইতিহাস। পাঠ্যগ্রহের কারণেই তিনি লিখেন মূলত ইতিহাস এবং ধর্মদর্শনের মিশেলে। প্রথাগত ধর্মীয় আবহের বাইরে গিয়ে নির্মাণ করার চেষ্টা করছেন নতুন এক ভাষাভঙ্গী। সাবলীল, প্রাঞ্জল আর সাহসী গদ্য দিয়ে তিনি আমাদের চেনা চিত্রকে দৃশ্যমান করেন নতুন এক উপাখ্যানের আদলে। এটাই তাঁর বিশেষত্ব।
বর্তমানে মুক্ত পৃথিবীর মানুষ হিসেবে একমাত্র কাজ -লেখালেখি।
গ্রন্থালোচনা
“প্রিয়তমা”নামকরণের কারণ :
এতে উম্মুল মুমীনিন তথা রাসূলুল্লাহ (সা:) এর প্রিয়তমা স্ত্রীদের কথা এতে উল্লেখ করেছেন।
“প্রিয়তমা” রাসূলপত্নীদের জীবনীগ্রন্থ নয়, বরং তাঁদের জীবনের সুরম্য গল্পভাষ্য। জীবনের গল্পগুলো জীবনীর মতো নয়, তা উপস্থাপন করা হয়েছে গল্পের আদলে। জীবনের গল্প বলতে গিয়ে উঠে এসেছে তাঁদের সঙ্গে রাসূলের দাম্পত্য ভালোবাসা, সাংসারিক প্রেম, পারস্পরিক সৌহার্দ, জীবনযুদ্ধে লড়ে যাওয়ার সঞ্জীবনী, নারী অধিকার, নারীশিক্ষাসহ আরো অনেক অজানা কাহিনীকাব্য।
আয়েশা (রাঃ) বউ হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ঘরে আসার কিছু দিন পরের ঘটনা।
তাঁর কিশোরী মনে নানা প্রশ্নের উদয় হয়, অকারণ কৌতুহল দোলা দিয়ে যায় মনে। রাসূল (সা:) কাকে অধিক ভালোবাসেন? তাঁকে কতটুকু ভালোবাসেন? অন্য স্ত্রীদের চেয়ে বেশি না কম?
একদিন সাহস করে জিজ্ঞেস করেই ফেললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে কতটুকু ভালোবাসেন?
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একটু চিন্তা করে বললেন, তোমার এবং আমার মধ্যে ভালবাসার বন্ধনটা এত শক্ত, যেমন একটা রশির মধ্যে সুতাগুলো শক্তভাবে জড়িয়ে থাকে। একই বাঁধনে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা থাকে। রাসূলের জবাব শুনে তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন।
এবং এরপর থেকে মাঝে মাঝেই জিজ্ঞেস করতেন, হে আল্লাহর রাসূল!
বন্ধন কি আগের মতোই আছে না ঢিল হয়ে গেছে?
রাসূলুল্লাহ (সা:) তাঁর দুষ্টুমির জবাবে বলতেন বন্ধন আগের মতোই দৃঢ় আছে। বাঁধনে কোন দুর্বলতা বা পরিবর্তন আসেনি।
একবার হযরত মায়মুনা বিনতে হারিস (রা:) গিরগিটির গোশত রান্না করেন।
রাসূলুল্লাহ দেখে বললেন আমি তা খেতে পছন্দ করি না, সাহাবীদের বললেন তোমরা খেতে পারো। মায়মুনা (রা:) হয়তো আগে এ মাংস খেতেন কিন্তু রাসূলের অপছন্দ দেখে তিনি নিজের অপছন্দের কারণ বানিয়ে নিলেন।
এ কেবল দু’জনের মাঝে অপরিসীম ভালোবাসা থাকলেই সম্ভব।
একজন সঙ্গী যখন তার অপর সঙ্গীর পছন্দ- অপছন্দকে নিজের সৌভাগ্যের ললাট লিখন করে নেয় তখন এ ভালোবাসা জাগতিক সকল ক্ষুদ্রতা ও পরিসীমা ছাড়িয়ে যায়।
এমন ভালোবাসার জন্যই যুগে যুগে রচিত হয়েছে অসংখ্য মহাকাব্য।
রাসূলের ভালোবাসার ছায়ায় থেকে সকল উম্মুল মুমীনিনই নিজেদের কোনো না কোনো মহত্ত্বে উচ্চকিত করে তুলেছিলেন। কেউ ছিলেন, হাদিসবিশারদ, কেউ জ্ঞানের আধার, কেউ খোদাভীতিতে অতুলনীয়, কারো ছিলো কোরআন পাঠের মুগ্ধকর চরিত্র, তেমনি কেউ ছিলেন দানশীলতায় এগিয়ে।
আমরা দুই থেকে তিনজন উম্মুল মুমীনিনের জীবনী সহ রাসূলুল্লাহ এর সাথে বিবাহ পরবর্তী,ও পারিবারিক সকল ঘটনাই মোটামুটি জানি।
বাকি আট থেকে নয় জনের ব্যাপারে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া পর্যন্তই আমাদের জ্ঞান স্থগিত।
প্রিয়তমা বইটিতে এগারজন উম্মুল মুমীনিনের রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগ থেকে বিবাহ পরবর্তী জীবন, রাসূলের সাথে কেমন করে দিন অতিবাহিত করেছেন, আর তাঁর সাংসারিক জীবন কেমন ভালবাসাপূর্ন ছিলো তা খুব যত্নের সহিত লেখক আমাদের জানিয়েছেন।
কোনো একজন আম্মাজান রান্নায় পারদর্শী ছিলেন, রাসূলুল্লাহ তাঁর রান্নার প্রশংসা করতেন।
কেউ তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী ছিলেন, রাসূল সা: এর তাঁর বুদ্ধির তা’রীফ করতেন।
নারীদের বিষয় গুলোতে (যেমন অন্য স্ত্রীদের একটু অন্য চোখে দেখা) তিনি অন্য স্ত্রীদের সতর্ক করে দিতেন।
কেউ ভুল করলে রাসূল সা: তাদের ভুল শুধরে দিতেন।
আবার তিনি স্ত্রীদের কাছে নিজের প্রবল ব্যক্তিত্ত্বের বাহাদুরি প্রকাশ করতেন না, নিজেকে স্ত্রীদের কাছে সমর্পণ করে দিতেন তাদের ভালোবাসার কাছে।
মোট কথা রাসূল সা:এর জীবনের টুকরো টুকরো আয়না ছিলেন তারা।
যে আয়নায় তাকালে রাসূলের জীবনের ছায়াচিত্র স্বচ্ছ হয়ে ভেসে উঠবে।
তাঁরা তাঁর আলোকেই নিজেদের জীবনকে সাজিয়ে তুলেছেন এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য উৎসর্গ করছিলেন তাঁদের লব্ধ জ্ঞানের আধার।
আমাদের লৌকিক সমাজের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই শোনা যায় স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্যকলহ, মানসিক টানাপোড়ন, পরস্পরের বিশ্বাসহীনতা, সংসার ভাঙ্গার করুণ সুর। আমরা কখনো কি তাঁদের সংসারের আদলে আমাদের পারিবারিক সমস্যা গুলো দূর করার চেষ্টা করেছি? হয়তো করা হয়নি! অথচ তাঁদের জীবনে রয়েছে প্রেম আর ভালোবাসা পূর্ণ এক সংসারের ছায়াচিত্র।
যা সমগ্র পৃথিবীর জন্য শিক্ষণীয়। যে গ্রহণ করবে তার জীবন আলোকিত হবে।
এ গ্রন্থটিতেই সেই সুখী আর প্রেমময় জীবনের গল্পই বলা হয়েছে।
★মন্তব্য: অনেকে নাম দেখেই নেগেটিভ আচরণ করেছেন তাদের বলছি জাষ্ট দুই পেইজ পড়ে দেখুন তারপর আপনিই ডিসিশন নিন নামটা স্বার্থক হয়েছে কিনা।
বইয়ের ব্যাপারে বলবো, আমরা সবাই নরমালী ফল খাই বা খেতে পছন্দ করি।
সেই ফল কে লেখক জুস আকারে আমাদের খাইয়েছেন।
যাতে উপকরণ বেশি থাকলে ও খাবার কিন্তু পিওর আবার টেষ্ট ও একটু বেশি।
আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) মুস্তালিক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে হার হারিয়ে গেলে তিনি তা খুঁজতে গিয়ে দেরি করে ফেলেন। ফিরে এসে দেখেন কাফেলা তাকে ফেলে চলে গেছেন।
এর কিছুক্ষণ পর এক সাহাবা এসে তাকে চাদর দিয়ে ঢাকা অবস্থায় পান।
আমার জানা ছিলো যে, রাসূলুল্লাহ প্রতি যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে পিছনে একজন সাহাবা কে রেখে আসতেন।
যাতে তিনি কাফেলা কোন কিছু ফেলে আসলে তা নিয়ে আসতে পারেন।
কিন্তু বইয়ে লিখা ছিলো সাহাবী আফওয়ান( রাঃ)অধিক ঘুমকাতুরে ছিলেন তাই তিনি দেরিতে ঘুম থেকে উঠে রওয়ানা করলেন।(ঐ বিষয়টি উল্লেখ ছিলো না, হয়তো আমার জানায় ভুল ছিলো )
আম্মাজান সাওদা (রাঃ) এর বয়সের স্থানে একটু হেরফের হয়েছে দেখলাম।
এক জায়গায় লিখা বিয়ের সময় বয়স ছিলো ৫৫বছর। আরেক জায়গায় ৫০বছর।
বাদবাকি চমৎকার উপস্থাপনা।
এক কথায় ভালো লাগার মতোই।
রাসূলুল্লাহর প্রিয়তমাদের আল্লাহ পাক শান্তিতে রাখুক।
সবাইকে পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে শেষ করছি।